ওসামা বিন লাদেন জিতেছেন কি ?

বিশ্বব্যাপী ইসলামের নামে যে সন্ত্রাসবাদী লড়াই শুরু হয়েছে  তার সূচনা করেছিলেন সৌদি বংশোদ্ভূত ওসামা বিন লাদেন। পাকিস্তানের সুরক্ষিত অ্যাবোটাবাদের আস্তানায় মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানে তিনি নিহত হলেও সে লড়াই এখনো শেষ হয়েছে কিনা তা বলা মুশকিল। তাছাড়া পশ্চিমা সভ্যতা মধ্যপ্রাচ্যের তথাকথিত স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে বিন লাদেনের অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার মত ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্বব্যাপী তিনি যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন তার
রেশও রয়ে যাবে বহুদিন। মুসলমানদের ক্ষোভ , হতাশা বঞ্চনাকে কাজে লাগিয়ে তিনি একশ্রেণীর লোককে ধর্মান্ধ উগ্র চরমপন্থী সন্ত্রাসীতে পরিণত করেছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এজন্য ইরাক-আফগানিস্তানকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি আরব বিশ্বে পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। বিন লাদেনও এদের অনেকেরই পরিবর্তন চেয়েছিলেন ভিন্ন পথে, ভিন্ন উপায়ে। অন্যদিকে কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী প্রেসিডেন্ট হিসাবে পরিচিত জর্জ ডব্লিউ বুশের পরিবর্তে সেখানে ক্ষমতায় আসীন হয়েছে অপেক্ষাকৃত উদার কেনিয়ান বংশোদ্ভূত বারাক ওবামা। মার্কিন নীতিতেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হলে জঙ্গিবাদ দমনও অনেকটা সহজ হবে। তাইতো মুসলিম দেশগুলোকে আরো উদার গণতান্ত্রিক করে গড়ে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। আর এসব পরিবর্তনে ওসামা বিন লাদেন যে লড়াই শুরু করেছিলেন তার বিজয় সূচিত হবে কিনা জানি না তবে এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে শান্তি স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। এসব নিয়েই লিখেছেন প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক এন্ড্রু সুলিভান
আমাকে ঘুম থেকে জাগানোর আগে আমার এক বন্ধু দরজায় জোরে জোরে কড়া নেড়ে বলছিল, তারা বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এরপর সে হঠাত্ করেই আমার বিছানায় শুয়ে পড়ে এবং চিত্কার করে বলতে থাকে ইতিমধ্যেই তারা তাদের কাজ শেষ করে ফেলেছে। এখন তোমার ওঠা উচিত। আমি তখনও ঘুমাচ্ছিলাম এবং এরও প্রায় এক ঘণ্টা পর আমি আমার ল্যাপটপ খুলে দেখতে পেলাম টুইন টাওয়ারের একটিতে তখনও আগুন জ্বলছে। কিন্তু তাত্ক্ষণিকভাবেই বুঝে গেলাম এটি কোন বোমা হামলা নয়, পরে জানা গেল, দুটি বিমান হামলা চালিয়েছে টুইন টাওয়ারে। আমি দৌড়ে আমার বন্ধুর কাছে গেলাম এবং তার টেলিভিশনের দ্বিতীয় বিমানটির ভিডিও ফুটেজ দেখলাম সেটি অনায়াসেই বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে ঢুকে পড়ছে। মনে হলো কোন ঘুমন্ত চালক সেটি নিয়ে  খেলা করছে। আর সম্ভবত সেদিন সারাবিশ্বই ঠাণ্ডা মাথায় এই ধরনের একটি গণহত্যার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু কি ধরনের জঘন্য কাজ ছিল সেটি। আমাদের গোটা কামরা জুড়ে ছিল পিনপতন নীরবতা। সম্ভবত আমরা সবাই দাঁড়িয়েছিলাম। সবারই চোখে-মুখে ছিল চরম উদ্বেগ আর উত্কণ্ঠা। এর কিছুক্ষণ পরই আমি বাইরে বেরিয়ে আসি এবং দেখি সবাই শুধু ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে। এর আরো পরে দেখলাম কিভাবে একটার পর একটা বিশ্ব সভ্যতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত টুইন টাওয়ার ধসে পড়ছে। এরই মধ্যে নানা গুঞ্জনের ভেতরেও আমি ভাবছিলাম ভিন্ন কথা। কত সুষ্ঠু ছিল সন্ত্রাসীদের চিন্তা কাজ। এটি ছিল বাকশক্তি রোধ করা জীবন্ত এক ছবি, যেখানে মৃত্যুর মিছিল চলছিল। যদিও সেদিন অন্যদের মত আমিও এটিকে নিতান্তই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করেছিলাম। কিন্তু ঘটনার ১০ বছর পর এখন বুঝতে পারি সেদিনের সেই টাওয়ার ধসে পড়া কতটা তাত্পর্যপূর্ণ ছিল এবং এই ঘটনা পরবর্তীতে বিশ্বকে কতটা বদলে দিয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র বা টুইন টাওয়ারে হামলার দশ বছর পর এভাবেই মূল্যায়ন করেন প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক দ্য নিউ রিপাবলিক সম্পাদক লন্ডনের সানডে টাইমসের কলামিস্ট এন্ড্রু সুলিভান।  তার ভাষায়, দীর্ঘ এক দশক পর ঘনিষ্ঠভাবে বুঝতে পারি কত হালকাভাবে এমন একটি জঘন্য কাজ করেছিলেন ওসামা বিন লাদেন। আমার মাথায় এখনও বিষয়টি ঘুরপাক খায় যে, কত সযত্নে তিনি ফন্দিটি এঁটেছিলেন এবং আমরাও তার ফাঁদে পড়েছিলাম। আমাদের এই বিষয়টিও উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, আমেরিকানদের ধ্বংস করার এটি ছিল একটি বড় কৌশল। এমনকি এটি যদি কৌশলগতভাবে ব্যর্থও হয়ে থাকে কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আল কায়েদা বিশ্ববাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে যে, আকাশপথেও আত্মঘাতী হামলা চালানোর সামর্থ্য তাদের রয়েছে। আর তারই ফলশ্রুতিতে আমরা দেখলাম পশ্চিমা পুুঁজিবাদ গণতন্ত্রের অন্যতম প্রতীক টুইন টাওয়ার ধসে পড়ছে। পেন্টাগনে বিমান বিধ্বস্ত হচ্ছে এবং আরো একটি বিমানকে অবতরণে বাধ্য করা হয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীকে দেখলাম একদিক খোলা টিনের ক্যানের মত নেতিয়ে পড়েছে। এমনকি সেদিন পেনসিলভানিয়ার আকাশে আতংক সাহসের চূড়ান্ত নজির আমরা দেখেছি। কত সাধারণ পরিকল্পনায় কতটা অসাধারণ কাজ তারা করেছিল। সেদিন আমাদেরই বিমান তারা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। শান্তিপূর্ণভাবেই সেদিন তারা বিমানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল এবং সেটিকেই তারা ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছিল। যা অনেকটা বিস্ময়করও বটে। অন্যদিনের মত সেদিনও তারা তাদের অফিস শুরু করেছিলেন কিম্বা শুরুর অপেক্ষায় ছিলেন। এদের অনেকেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ কেউ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিলেও কেউবা জানালা দিয়ে লাফও দিয়েছিলেন। ফলে সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের কথা আমি যখন ভাবি তখন কেবলই মনে হয় মৃত্যুর শেষ মুহূর্তটিকে যারা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন তখন তারা কি ভাবছিলেন? তাদের জন্য সন্ত্রাসী দ্রুত শেষ হয়ে গেলেও আমাদের জন্য তো সবেমাত্র শুরু। ফলে আমি যখনই টাওয়ার ধ্বংসের দৃশ্যটি স্মরণ করি তখনই বিষয়টির অনেক গভীরে চিন্তা করি। এটি ছিল মার্কিন নির্বুদ্ধিতার একটি ফল এবং আমেরিকান সেঞ্চুরির এমন একটি পরিসমাপ্তি যেখানে নতুন বিশ্ব সত্যিকার অর্থেই বুঝতে পেরেছে যে, পৌরাণিক বর্বরতার কাছে তারা এখনো নিরাপদ নয়। আমরা দেখলাম এক নিমিষেই গোটা সভ্যতা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো যা বিশ্বে সভ্যতার প্রতীক হিসাবে আকাশ ছুঁতে চেয়েছিল। এমনকি এও দেখলাম গুহায় বসবাসরত একদল ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠীর দ্বারা শক্তিশালী পেন্টাগন কিভাবে ধর্ষিতা হলো। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমরা এখনও জানি না যুদ্ধ শেষ নাকি মাত্র শুরু। তবে একটি জিনিস আমরা সবাই জানি, আর তা হলো যে কোনভাবে যে কোন স্থানে তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আর মনে হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। /১১-এর হামলা মুসলিম যুব সমাজকে প্রলুব্ধ করে এবং তারা বিপথগামী হতে থাকে। পক্ষান্তরে এই হামলার মাধ্যমে প্রথমে আফগানিস্তান পরবর্তীতে ইরাকের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর মধ্যে দিয়ে সভ্যতা রক্ষার লড়াই জোরদার হয়। এসব লড়াইয়ে আমাদের প্রেসিডেন্ট যতটা সম্ভব ভালই করেছে কিন্তু একটার পর একটা নানা ধরনের হুমকি আসতে থাকে। এরই মধ্যে অ্যানথ্রাক্স আতংক ছড়িয়ে রহস্যময় খামে ভরে তা গ্রাহকের কাছে পাঠানো হতে থাকে। আমাদের বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়। গোটা দেশটিকে পুলিশি রাজ্যে পরিণত করা হয়। এমনকি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের আওতায় নতুন বাহিনী গড়ে তোলা হয় এবংগুয়ান্তানামো  বেএর মত কুখ্যাত কারাগারও গড়ে তোলা হয়। এজন্য সংবিধানের মৌলিক বিধানকে পাশ কাটিয়ে এমন কিছু বিধি-বিধান প্রণয়ন করা হয় যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। কিন্তু এই উগ্র চরমপন্থীদের হুমকি এতটাই তীব্র ছিল যে, তা নাজি বা সোভিয়েট হুমকিকেও হার মানিয়েছে। ফলে আমাদের ঐতিহ্যগত যে নৈতিক অবস্থান যেমন হত্যা নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা ইত্যাদি অবস্থান থেকে আমরা সরে এসেছি। ফলে নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনীর পথকেই আমরা অনুসরণ করেছি। কেননা আল-কায়েদার ভয়ে আমরা এতটাই ভীত ছিলাম যে সাধারণ বিচার-বুদ্ধিও সেখানে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এমনকি /১১-এর মত ঘটনা না ঘটলে ইরাক যুদ্ধ কখনোই শুরু হতে পারতো না। ভয়-ভীতিই আমাদের সামনে এগিয়ে চলার সাহস জুগিয়েছে। আর তা না হলে ইরাক যুদ্ধের বিপরীতে কোন যুক্তি দাঁড় করানো যেত না। আমাদের মনে সব সময় যদি মৃত্যুভয় কাজ না করতো তাহলে হয়তবা ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এবং তা সন্ত্রাসীদের কাছে চলে যেতে পারে এমন আশংকাও তৈরি হতো না। এমনকি কেউ তা বিশ্বাসও করতো না। কিন্তু সে সময় সরকার যা বলেছে আমরা তাইই একবাক্যে মেনে নিয়েছি  এবং তা বিশ্বাস করেছি। যদিও এটি একটি ব্যাখ্যা হতে পারে কিন্তু ক্ষমার যোগ্য হতে পারে না। আমিও বিশ্বাস করি না যে কোন পরিস্থিতিতেই হোক না কেন সরকারকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু সময়ের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিনীরা তা করেছে এবং বিন লাদেন ভীতি থেকে তারা মুক্তি চেয়েছে। পক্ষান্তরে, বিন লাদেন কি চেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ এসব দেশের মাটি থেকে মার্কিন সৈন্যের বিতাড়ন। ইতিহাস প্রমাণ করতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি হয়তোবা সঠিক পথেই ছিলেন কিন্তু পদ্ধতিটি সঠিক ছিল না। আর তাইতো ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ গণতন্ত্রের পথে হেঁটে চলেছে এবং নেতৃত্বেও নাটকীয় পরিবর্তন ঘটছে। এমনকি ইরাকও আজ মার্কিন বৈরী ইরানও সিরিয়ার দিকে ঝুঁকছে। যদিও এক্ষেত্রে আফগানিস্তানে লড়াই শুরুটা কিছুটা যৌক্তিক ছিল। কেননা সেখানে তালেবান আল-কায়েদার ঘাঁটি, যা ধ্বংস করা ছিল জরুরি। প্রায় ১০ বছর পর ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে এজন্য প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ধন্যবাদ কিন্তু বুশকে নয়। তারপরও বলা যায়, পাকিস্তানী বন্দিদের হুমকি এখনো রয়ে গেছে। তালেবানরা আমাদের শেষ সৈন্য প্রত্যাহারের অপেক্ষায় রয়েছে এটাই বাস্তবতা
অন্যদিকে সন্ত্রাসবিরোধী এই লড়াই চালাতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ দিশেহারা। অর্থনৈতিক মন্দায় চাকরি হারিয়েছে হাজার হাজার লোক, ঋণ এবং বাজেট ঘাটতির রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত এক দশকে যুদ্ধে ব্যয় হয়েছে . ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু তা সত্ত্বেও লাখ লাখ  ইরাকি এখনো নরকে বসবাস করছে যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা জাতিকে এই দুঃসহ অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিন লাদেন ভীতি অপসারিত হয়েছে যদিও ইসলামী জিহাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া সুখের বিষয় এই যে, আল-কায়েদার রাজনৈতিক দর্শন বিশ্বব্যাপী খুব একটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। পশ্চিমা এশীয় মডেলের পুঁজিবাদের তুলনায় এর বিশেষ কোনো আবেদন নেই। বরং তুরস্ক ইন্দোনেশিয়া ভিন্ন উপায়ে ইসলামী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাই তো বলা যায়, বিন লাদেন তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ভয় আমাদের থামিয়ে দিয়েছে। আমাদের সহনশীলতা ধ্বংস হয়েছে। সেপ্টেম্বরের দুঃসহ সকাল আমাদের অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। তারপরও আমাদের উপলব্ধি করার সময় এসেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বহু নিরাপরাধ লোককে শাস্তি দিয়েছে এবং নির্যাতন করেছে। যা আমাদের সংবিধানকে ভূলুণ্ঠিত করেছে যা এক সময় যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা দিয়েছে। ফলে আমরা যারা বেঁচে আছি এবং নিজেদের সভ্য বলে দাবি করি আজ নিজেরাই নিজেদের ভুল বুঝতে পারি। আর এটিই মার্কিন গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হতে পারে। যদিও আশংকা থেকে যায় শত্রুরা আবারো বড় ধরনের ভুল করতে পারে। একমাত্র আশাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে
আল-কায়েদা অকার্যকর কিভাবে
বেশ কয়েক বছর আগেই এই লড়াই শেষ হওয়া উচিত ছিল। সেক্ষেত্রে আমাদের বড় ধরনের কিছু ভুল ছিল। যার ফলশ্রুতিতেই /১১-এর হামলার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করি। এই ভুলের মধ্যে কিছু কৌশলগত কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক কিছু পারিপার্শ্বিক। যেমন এর মধ্যে সিআইএ ব্যর্থতা অন্যতম। কেননা /১১ হামলার আগে আল-কায়েদা সদস্যরা যে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছে তা জানাতে তারা ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে টুইন টাওয়ার পেন্টাগনে বিমান হামলা চালানোর আগ পর্যন্ত বিষয়ে তাদের বিশেষ কোন মনোযোগ ছিল না এবং কেন ছিল না তা এখনো জানা যায়নি। অন্যদিকে কৌশলগত আর একটি বড় ভুল হলো পাকিস্তানে আল-কায়েদাকে ছোট করে দেখা। পাকিস্তানী জেনারেলদের বিশ্বাস করে বুশ প্রশাসন ওসামা বিন লাদেনের ব্যাপারে সবসময়ই নীরব থেকেছে এবং অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে। বিন লাদেন এক্ষেত্রে আমাদের বিভ্রান্ত করেছে এবং ইরাকে একটি ফাঁদ তৈরি করেছে। ইরাকে হামলা শুরুর আগেই তিনি তার জেহাদীদের সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া বিন লাদেন তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের জেনারেল পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে বিশ্বাস করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম একটি বড় ভুল। কেননা বিন লাদেন বরাবরই পাকিস্তানে বসবাস করে আসছিল এবং আল-কায়েদার লোকজনই সেখানকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করে। কিন্তু আল-কায়েদা একটি বড় ভুল করে বসে তারা শুধুমাত্র হত্যা সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। যা ইসলাম সমর্থন করে না। এমনকি তারা বোমা মেরে হাজার হাজার সতীর্থ মুসলিম ভাইকেও হত্যা করেছে। আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে ইরাক, জর্দানসৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশেও
কিন্তু এখন বিন লাদেনের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক বিরাট সুযোগ বয়ে এনেছে। সময় এসেছে ভুল শোধরাবার। তিউনিসিয়া, মিসর লিবিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসকের অবসান হয়েছে। আমাদের অবশ্যই উচিত হবে নতুন এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়া। সেখানকার সরকারের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। বরং নতুন কোন পুলিশি রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা নয়। এমনকি স্বাধীনতার এই লড়াই চলছে ইয়েমেন সিরিয়াতেও। আমাদের অবশ্যই উচিত সেখানকার বিরোধিদের সহায়তা করা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা। এমনকি ইসরাইলি-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতেও মার্কিন নীতি জরুরি। ফিলিস্তিনী স্বপ্নের প্রতি আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়। তাহলে হয়তোবা আমরা আবারো ইসলামী জিহাদের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবো। কেননা অন্য একটি আরব-ইসরাইল যুদ্ধ আবারো আল-কায়েদার নতুন নেতা আইমান আল জাওয়াহিরিকে ফায়দা লুটার সুযোগ করে দিতে পারে
এছাড়া পাকিস্তান এখনও বিশ্বব্যাপী ইসলামী জিহাদের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সেখানে ড্রোন হামলা চালালে তারাও আরো বেশি বেসামরিক লোককে হত্যা করতে এবং পরবর্তী প্রজন্মও জঙ্গিতে পরিণত হবে। তাই পরিশেষে বলা যায়, ড্রোন বিমান বা অন্য কোন হামলাই যুদ্ধ জয়ের একমাত্র উপায় নয়। বরং আমরা কিভাবে এক্ষেত্রে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে পারি সেটিই বড় বিবেচ্য বিষয় হতে পারে। যেমনটি সালমান তাসেরের মত যারা সাহসের সঙ্গে ইসলামী জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে এজন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখছে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর তাসেরকে এজন্য জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। এমনকি গত ২৬ আগস্ট তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। তাই তো বলা যায় শত্রু এখনো শেষ হয়ে যায়নি এবং ধর্মীয় এই উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইও এত সহজ কাজ নয়। কিন্তু এখন সময় এসেছে দীর্ঘ এক দশকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার। ++সূত্র :নিউজ উইক